কলকাতা : কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। কিন্তু এতো অসাধ্য সাধন। এ নিয়ম কি মানা সম্ভব ? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। ঘটনার সুত্রপাত সরকারি নির্দেশ কে কেন্দ্র করে। গত কয়েকদিন আগেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এবার রাজ্য সরকারি কর্মীদের আইফোন (i-PHONE) কিনতে হবে। সম্প্রতি নবান্ন মারফৎ এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সংশয়ের মাত্রা কিছুটা কমেছে নেহাত ওই তালিকায় সরকারি আধিকারিকদেরই এই নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে রাজ্য সরকার মারফৎ এই নির্দেশ দেওয়া হল ?
এ বিষয়ে সরকারি তরফে বলা হয়েছে, অ্যান্ড্রয়েড ফোনের তুলনায় আইফোন (i-PHONE) বেশি সুরক্ষিত এবং নিরাপদ। এক্ষেত্রে সরকারি স্তরে ফোনে আড়িপাতার মতো স্পর্শকাতর প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে সরকারি যুক্তি এবং বিশ্লেষণে। তাহলে আসুন বিষয়টি ভালো ভাবে খুঁটিয়ে জেনে নেওয়া যাক। এ বিষয়ে সরকারি ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সরকারি কাজ কর্মের জন্য আমলা এবং আধিকারিকদের কখনও তার দফতরের মন্ত্রী অথবা আমলা এবং সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে বেশির ভাগ সময় ইমেইল, হোয়াটস অ্যাপে চ্যাট অথবা ম্যাসেজ আদান প্রদান করতে হয়, আবার কখনও সরাসরি ফোনে কথা বার্তা সাড়তে হয়। সেক্ষেত্রে সরকারি মন্ত্রী এবং আমলা ও আধিকারিকদের মধ্যে কথোপকথন, ম্যাসেজ আদান - প্রদান যাতে এনক্রিপটেড অর্থাৎ প্রকাশ্যে না চলে না আসে অথবা বাইরে থেকে কেউ আড়ি পেতে ফোনের গোপন তথ্য না পেয়ে যায় সে জন্যই অ্যান্ড্রয়েড ফোনের বদলে সরকারি আমলা এবং আধিকারিকদের আইফোন ব্যববার বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে নবান্ন মারফৎ ওই নির্দেশিকায়। কারণ আই ফোনে অবৈধ ভাবে কেউ লুকিয়ে গোপন তথ্য হাতানো বেশ কষ্টসাধ্য বলে জানানো হয়েছে। যা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অতিব সহজ বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু শুধুই কি সরকারি তথ্য নিরাপদ রাখার কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত, সাম্প্রতিক নবান্ন মারফৎ এই নির্দেশ নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনীতির ময়দানে কাঁটা ছেড়া শুরু হয়েছে গোটা রাজ্যে। বিরোধীরা সরকারি এই সিদ্ধান্ত কে সরকারের দুর্নীতি আড়াল করার প্রয়াস বলে ইতিমধ্যেই কটাক্ষ করেছে। অবশ্য বিরোধীদের এই যুক্তি যে অমুলক নয়, বর্তমান রাজ্য সরকারের দুর্নীতি কাণ্ডে সেই ছবি বেশ স্পষ্ট। তবে বিরোধীরা যাই বলুক, রাজ্য সরকার অবশ্য তার সিদ্ধান্তেই অবিচল। কারণ বিগত দিনে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে 'পেগাগাস' (PEGAGAS FACT) কাণ্ড বা লুকিয়ে ফোনে আড়িপাতার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তোলপাড় গোটা দেশ। এ বিষয়ে কখনও কেন্দ্র কখনও ক্ষমতাসীন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি বারংবার লুকিয়ে ফোনে আড়িপাতার মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে ঝড় তুলেছে |
তবে এ রাজ্যের ক্ষেত্রে এই নিয়ম একচুল পরিবর্তন হবেনা বলে সরকারি ভাবে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর তা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে আশঙ্কার মেঘ জমতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে সরকারি কর্মচারীদের একাংশের বক্তব্য, এনিতেই গত কয়েক বছর সরকারি কর্মীদের ডিএ বৃদ্ধির বিষয়ে উদাসীন রাজ্য সরকার। তার ওপর সাম্প্রতিক অগ্নিমূল্যের বাজারে কালঘাম ছুটছে। এই অবস্থায় অত দাম দিয়ে আইফোন ক্রয় করা যে মোটের ওপর গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। তবে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত বদল করে কি না সেটাই এখন দেখার। তবে আপাতত আই ফোন কেনার টাকা জোগাড় করতে হবে রাজ্য সরকারের আমলা থেকে শুরু করে আধিকারিক বর্গীয় কর্মীদের ।
0 Comments